যেকোন বাজে অভ্যাস পাল্টানোর উপায়

যদি আপনি নিজের জীবন টাকে লক্ষ্য করেন তাহলে সেটা অসংখ্য অভ্যাস নিয়ে তৈরি৷ আর এই অভ্যাস গুলোই আমাদের প্রতিদিনের জীবন যাএাকে নির্ধারন করে৷ যেহেতু এই অভ্যাস গুলো ভীষণ ছোট ছোট হয়তো আপনি নাও উপলব্ধি করতে পারেন যে আসলে এগুলো কতখানি শক্তিশালী৷ 

যদি প্রতিদিন রিপিট করা হয় তাহলে একটা ছোট কাজ ও বড় হয়ে দাড়ায়, যেমনঃ- প্রতিদিন ১০ টাকা করে জমানো বা প্রতিদিন ১ টা করে সিগারেট খাওয়া, এগুলো র্দীঘদিন ধরে চলতে থাকলে অনেক বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করার ক্ষমতা রাখে৷ 

যদি আপনি আপনার অভ্যাস গুলোকে একবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিখে যান তাহলে আপনি আপনার পুরো জীবন টাকেই আপনার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন৷ 

James Clear এর বই Atomic Habits থেকে কিছু এরকম কিছু পদ্ধতি শেয়ার করবো যেটা থেকে আপনি নিজের মধ্যে ভাল অভ্যাস গুলো তৈরি করতে পারেন এবং খারাপ অভ্যাস গুলো বাদ দিতে পারবেন৷ 

1:- Small habit can have big impact on your life

ভাবুন একটা প্লেন Los Angeles থেকে New York এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো, এবার টেকঅফ করার সময় সেই প্লেনের পাইলট যদি প্লেনের মুখটাকে মাএ ৩.৫ ডিগ্রি দক্ষিণের দিকে ঘুরিয়ে নেয় তাহলে প্লেনের মাথাটা হয়তো কয়েক ফুট বাকা হবে৷ 

প্লেনের বাইরে থেকে বা ভিতরে বসে থাকা যাএিও সেইটা বুঝতে পারবে না, কিন্তু দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌছানোর সেই লম্বা যাএায় সেই ছোট Movement টা একটা বিশাল বড় পরিবর্তন করে ফেলবে এবং প্লেনটি New York এ ল্যান্ড করার বদলে Washington DC তে গিয়ে ল্যান্ড করবে৷ 

যদি আপনি আপনার জীবনে একটা ভাল পরিবর্তন আনতে চান তাহলে আপনাকে এটা বুঝতে হবে, পরিবর্তন আনতে হলে দরকার ধৈর্য এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যে আপনার অভ্যাস গুলো আপনাকে সঠিক দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ যদিও আপনি দেখার মতো দ্রুত কোন ফলাফল নাও দেখতে পারেন৷ 

তাই যদি আপনার কখনো মনে হয় যে আপনার ভাল অভ্যাস গুলো দিয়ে আপনি ভাল কিছু দেখতেই পারছেন না তাহলে তখন তার ফল খোজা বন্ধ করে বরং অভ্যাসটা আপনাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেটাকে লক্ষ্য করুন৷ 

যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টে এখন ১ টাকাও না থাকে তাহলে আপনি যদি প্রতি মাসে কিছু করে টাকা হলেও জমাতে শুরু করেন তাহলে আপনি বলতে পারেন যে আপনার অভ্যাস আপনাকে সঠিক দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ হয়তো এখন এর ফলাফল টা খুব একটা বড় মনে না হলেও কয়েক মাস বা কয়েক বছর যদি আপনি এটা করতে থাকেন তবে সেটা একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে৷ 

একিভাবে একজন কোটিপতি যদি তার আয়ের থেকে বেশি খরচ করতে শুরু করে তাহলে একমাস পরে তার ব্যাংক একাউন্টে পরিবর্তন এতাটাও চোখে পড়বে না কিন্তু এভাবে র্দীঘদিন চলতে থাকলে একটা সময় তার সেই বদঅভ্যেস এর মাসুল গুনতে হবে৷

নিজের জীবনে বড় কোন পরিবর্তন আনার জন্য আপনাকে বিশাল বড় কিছু পরিবর্তন করতে হবে, সেটা কিন্তু না বরং আপনার ব্যবহারে ছোট ছোট পরিবর্তন নিয়ে পারেন যেগুলো বার বার করতে থাকলে সময়ের সাথে সাথে যোগ হতে হতে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে৷ 

2ঃ- Cue, craving, response and reward is the 4 step habit loop

বাড়িতে আসার পর যখনি আপনি নিজের অন্ধকার ঘরে ডুকেন তখন আপনাকে এটা ভাবতে হয়না যে এরপর কী করবেন? আপনি অটোমেটিক লাইটের সুইচ টা অন করার জন্য এগিয়ে যান আর এটা একটা অভ্যাস, এটা অসংখ্য বার করতে করতে এখন আর আপনাকে ভাবতে হয় না আপনি অটোমেটিক এটা করে ফেলেন৷ 

যেকোন অভ্যাস এর গুলো হয় Cue অথার্ৎ যেকোন একটা উদ্দীপনা থেকে৷ যেমন অন্ধকার ঘরে ঢোকাটা আপনার জন্য একটা Cue এর কাজ করে যাতে যেটা আপনি দেখতে পান তার জন্য কিছু একটা করার Craving অর্থাৎ ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে আর সেই Craving থেকে মুক্তি পেতে আপনি Response করেন কোন একটা Action নিয়ে৷ 

প্রতিটা অভ্যাস এর ক্ষেএেই এই একই পদ্ধতিটা অনুসরণ হয়৷ আপনি কী অভ্যাস গত ভাবে প্রতিদিন সকালে উঠেই চা খান? তবে হয়তো সেক্ষেত্রে আপনার সকালে ঘুম থেকে উঠা টা আপনার Cue, যেটা আপনাকে Alert feel করার একটা Craving কে পরিপূর্ণ করে, আর তখন আপনার Response হয় বিছানা থেকে উঠে এক কাপ চা বানিয়ে ফেলা আর তারপর আপনার Reward হলো Alert অনুভব করা৷ 

এখন যেহেতু আমরা বুঝে গেলাম যে অভ্যাস কিভাবে কাজ করে তাহলে চলুন এবার দেখে নেই এই জ্ঞানটাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে আমরা ভাল অভ্যাস গুলোকে গড়ে তুলতে পারি এবং খারাপ অভ্যাস গুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি৷ 

3:- Control cues to control your habits

৩ রকম ভাবে আপনি কোন Cue কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন৷ 

1:- change the environment 

প্রতিদিন বই পড়তে চান? বইটাকে সব সময় আপনার হাতের কাছেই রাখুন যেখানে আপনি সবসময় আসা যাওয়া করেন৷ 

বিস্কুট, চিপস এবং বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার এর বদলে ফল ফ্রুটস খেতে চান? তাহলে খাওয়ার টেবিলে বা ফ্রিজে বেশি করে ফল রেখে দিন৷ 

যতটা সম্ভব Cue গুলোকে চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করুন তাহলে দেখবেন সেগুলোর প্রতি আপনার Response অটোমেটিক বেরে যাবে৷ আমাদের আশেপাশের সাধারণ পরিবর্তন ও আমাদের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে৷ 

2:- Make a detail action plan

শুধু মাএ মুখে বলা, এখন থেকে আমি রোজ সকালে ব্যায়াম করতে যাবো, এটা যথেষ্ট না৷ যদি আপনি সত্যি সেটা করতে চান তাহলে তার জন্য আপনাকে আগে Detail action plan তৈরি করতে হবে৷ ঠিক কবে থেকে, কিভাবে আপনি সেটা করবেন, সেই পুরো Plan details আপনাকে বানিয়ে ফেলতে হবে৷ 

দেখি তাহলে কাল থেকে দৌড়াতে যাবো, এভাবে না বলে স্থির ভাবে বলুন যে, সোম, বুধ এবং শুক্রবার করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সবার আগে আমার প্রথম কাজ হবে দৌঁড়ানো এবং তারপর আপনার দৌড়ানোর জুতাটা চোখের সামনে কোথাও একটা রেখে দিন৷ 

এভাবে একটা ক্লিয়ার প্লান এবং একটা Visible cue এর সাহায্যে এই কঠিন অভ্যাস টাকেই আপনি আপনার নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে পারবেন৷ 

3:- Use habit stacking method 

হয়তো আপনি সকালে পড়ার অভ্যাস টা গড়ে তুলতে চান, কিন্তু কিছুতেই সেটা করতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে আপনি Use habit stacking method টা ব্যবহার করতে পারেন৷ 

উদাহরণ সরূপঃ- ধরুন আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খান আর এটা আপনার একটা Existing habit. 

প্রতিদিন সকালে চা খাওয়ার পরেই আপনি পড়তে বসবেন বলে ঠিক করে নিন৷ অর্থাৎ চা খাওয়ার Existing habit টার ঠিক উপরেই পড়ার অভ্যাস টাকে বসিয়ে দিন৷ এভাবে একটা Natural momentum তৈরি করে আপনি পড়ার অভ্যাস টাকে গড়ে তুলতে অনেকখানি সহজ করতে পারবেন৷ 

4:- Reward yourself cleverly to stick to any habit

১৯৫৪ সালে নিউরো সাইন্টিস্ট James old এবং Peter milner একটা টেস্ট করার করেন৷ তারা ইলেকটোড এর সাহায্যে কয়েকটি ইদুর এর মস্তিষ্কের মধ্যে ডোপামিনের ক্ষরন বন্ধ করে দেন৷ পরে দেখা যায় সেই ইদুর গুলোর মধ্যে বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছাই মরে যায় এমনকি খাওয়ার ইচ্ছে টাও চলে যায় ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই না খাওয়ার ফলে ইদুর গুলো সব মারা যায়৷ 

আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে ও ডোপামিন হরমোনের ক্ষরন হয় যেটা আমাদের মধ্যেও ভাল লাগার অনুভূতি তৈরি করে৷ যখন আমরা আমাদের পছন্দের কিছু খাই বা করি তখন এই ডোপামিন হরমোন আমাদের ভাল অনুভব করাতে থাকে আর এটাকেই আমরা ভাল অভ্যাস গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করতে পারি৷ 

যদি আপনার জগিং করতে ভাল না লাগে কিন্তু আপনি যদি আপনার পছন্দের শিল্পীর গান না শুনে থাকতে পারেন না তবে আপনি মনোস্তির করে নিতে পারেন যে শুধু জগিং করার সময় হেডফোন লাগিয়ে গান শুনবেন আর নয়তো না৷ কিছুদিন এর মধ্যেই হয়তো জগিং টা আপনার কাছে মজার একটা কাজ হয়ে উঠবে কারন ওর সাথে আপনার মস্তিষ্কের ভাল একটা কানেকশন হয়ে যাবে৷ 

5:- Make use of the 2 minute rule to start the activity 

কোন কাজ করতে যত কম Effort দরকার হয় এবং যত বেশি Reward পাওয়া যায় সেই কাজ গুলো আমরা বার বার করে অভ্যাসে পরিনত করে ফেলি৷ যেমন ফেসবুক চালাতে অনেক কম Effort দিতে হয় কিন্তু Reward সেই তুলনায় অনেক বেশি মিলে তাই ফেসবুক চালানোর অভ্যাস টা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়৷

কিন্তু রোজ ১০ পাতা করে বই পড়তে অনেক বেশি Effort দিতে হয় আর তুলনামূলক ভাবে Instant reward খুবই কম মিলে তাই এই অভ্যাসগুলো সহজেই গড়ে তোলা সহজ হয় না৷ 

আমাদের দরকার বই পড়া এই কাজটাকে যতকম সম্ভব Effortless করে তোলা আর এর জন্য 2 minute rule আপনাকে অনেকটা সাহায্য করবে৷ 

রোজ ১০ পাতা করে বই পড়তে চান? তাহলে রোজ একটা করে শুরু করুন যাতে কাজটা শেষ করতে ২ মিনিটের বেশি সময় না লাগে৷ এতে কঠিন কাজটাও আপনার কাছে অনেকটা সহজ হয়ে যাবে৷ 

এভাবে কয়েক দিন করার পর হয়তো আপনার এক পাতা বই পড়ার পর আরেক পাতা পড়তে ইচ্ছে করবে৷ মনে রাখবেন যেকোন কাজের কঠিন দিক টা হলো সেই কাজটা শুরু করা 

6:- Make your habit somehow immediately satisfying 

আমাদের পূর্ব পুরুষরা Retirement এর জন্য Long term savings করা বা healthy থাকার জন্য Diet করা, এগুলোর কোনটাই করতেন না৷ তাদের কাছে সেই মুহূর্তে গুরুত্ব ছিল, তাদের পরের খাবার টা জোগাড় করা এবং অন্যান্য জীব জন্তুর হাত থেকে নিজেদের প্রান বাচানো৷ 

আমরা এই Immediate return এর ফাদে পরেই আমরা প্রচুর বদঅভ্যেস তৈরি করে ফেলি৷ আজকে একটা সিগারেট খেলে আজকেই আপনার ক্যান্সার হয়ে যাবে না, হয়তো ২০ বছর পর গিয়ে সেটা দেখা দিবে৷ 

কিন্তু এই মুহূর্তে হয়তো সিগারেট আপনাকে সাময়িক ভাবে চিন্তা মুক্ত করতে সাহায্য করছে আর যার ফলে আপনি Long term effect টাকে Ignore করে নির্ভয়ে এই বদঅভ্যেস টাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন৷ 

তাই যখন কোন ভাল অভ্যাস এর ভাল কোন immediate return নেই তখন সেটাকে Continue করতে নিজেকে Motivate রাখার জন্য আপনি নিজে থেকে সেটার জন্য কোন একটা Immediate ভাল অনুভূতি যোগ করার ব্যবস্তা করতে পারেন৷ 

7:- Make use of habit contracts

Bran Haris নামের একজন ব্যাক্তি এই Habit contract টাকে ভীষণ সিরিয়াস নিয়ে নেন৷ তিনি তার Wife এবং Personal trainer এর সাথে একটা চুক্তি করেন আর সেটায় ছিল যে তিনি তার ওজন ২০০ পাউন্ড কমাবেন আর সেটা করতে তাকে যে অভ্যাস গুলো সাহায্য করবে যেমন, প্রতি সপ্তাহে তার ওজন মেপে দেখা, তার খাবার এর পর্যালোচনা করা, এগুলো তিনি কোনভাবে মিস না করে চালিয়ে যেতে থাকবেন বলে সেই চুক্তিতে সাইন করেন৷ 

যদি তিনি কোনদিন তার খাবার পর্যালোচনা করতে ভুলে যান তাহলে তার পার্সোনাল ট্রেইনার কে ১০০ ডলার পে করবেন এবং ওজন মাপতে ভুলে গেলে তার বউকে ৫০০ ডলার পে করবে৷ এতে তার এই ট্রিক টা কাজ করে যায়, কারন শুধু টাকা হারানোর ভয়ে না বরং তার কাছের মানুষের কাছে সম্মান হারানোর ভয়টাও তার মধ্যে চলে এসেছিল৷ 

আমরা মানুষরা সামাজিক জীব, তাই সম্মান টা আমাদের কাছে অনেক বড় তাই নিজের সম্মান টাকে বাজিতে লাগালে সেটা আপনার জন্য বড়সড় একটা Motivate এর কাজ করবে৷ 

আপনিও চাইলে Habit contract পদ্ধতি টা ব্যবহার করতে পারেন যদিও সেটা Haris এর মতো এত সিরিয়াস হবার দরকার নেই৷ কিন্তু আপনি চাইলে আপনার গালফেন্ড্র বা বেস্টফেন্ড্র বা কলিকের সাথে নিজেকে বদলানোর বাজি তো ধরতেই পারেন এতে আপনি অনেক বেশি Motivate হওয়ার জোগার পাবেন৷